Tuesday, April 21, 2020

কোভিড-১৯ বিষয়ক গবেষণার ফলাফল


বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং ব্র‍্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বাাংলাদেশে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতি এবং জনজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে যৌথভাবে ছয়টি পৃথক গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে। যে গবেষণাগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী, গার্মেন্টস কর্মী, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী ও হিজড়াসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত প্রভাব ‍দেখা হয়েছে। ১৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ফলাফল তুলে ধরা হয়।

বর্তমান পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত গবেষণায় হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের সংগ্রামের একটি উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে। এদের মধ্যে রয়েছে করোনা রোগী ব্যাবস্থাপনার সাথে যারা সরাসরি জড়িত অর্থাৎ ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মী তথা চিকিৎসক ও সেবিকা, গার্মেন্টস কর্মী এবং শহরের বস্তিগুলোতে বসবাসরত দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

স্বল্প সময়ে পরিচালিত কেস স্টাডিতে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের দরিদ্র ও হিজড়া জনগোষ্ঠীদের মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চ মাত্রার ভয় ও আতংক বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনার লক্ষণগুলো প্রায় অস্পষ্ট হওয়ায় এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য, হেয় প্রতিপন্ন, নজরদারি ও হয়রানি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আরেকটি গবেষণায় কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার সাথে যারা যুক্ত রয়েছেন, এমন ৬০ জন ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এতে  ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীরা জরুরীভিত্তিতে মানসম্পন্ন পিপিই’র প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। এক্ষত্রে তারা সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনার চাইতেও মানসম্পন্ন পিপিইর প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। সমীক্ষায় আরো উঠে এসেছে, তারা শুধু শারীরিকভাবেই পরিশ্রান্ত নন বরং তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আক্রান্ত হওয়ার যে ঝুঁকি রয়েছে সেই ভয়েও তারা তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন।


জেপিজিএসপিএস বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের উপার্জন, পুষ্টি, লিঙ্গ, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদির উপর  কোভিড-১৯ এর প্রভাব জানার জন্য একটি বহুস্তরীয় টেলিফোনিক জরিপ পরিচালনা করছে । প্রথম ধাপে, এপ্রিল ৬-১৩ তারিখ পর্যন্ত সময়ে, ১৩০৯ জন মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। মানসিক অবস্থা বিচারে দেখা গেছে যে, আংশিক উপার্জন (২৯ শতাংশ) কিংবা যাদের (১৩ শতাংশ) ‍উপার্জনে করোনার কোন প্রভাব নেই তাদের তুলনায় একেবারেই যাদের উপার্জন নেই (৫৮ শতাংশ) এমন পরিবারের মধ্যে অধিক মানসিক চাপ লক্ষ্য্ করা যায়।

একইভাবে ৩৭ ভাগ গৃহস্থালি হতে পাওয়া তথ্যানুযায়ী জানা যায়, চলমান এই সময় তারা প্রধানত ভাত, ডাল, এবং আলু খেয়ে জীবনধারণ করছে। পুষ্টিগত দিক বিচারে বাধ্য হয়ে যারা এইরকম বৈচিত্র্যহীন খাবার খেয়ে বেঁচে আছে তাদের মাঝে অধিক মানসিক চাপ লক্ষ করা গেছে। 

অন্য একটি সমীক্ষায় গ্রাম ও শহরের মানুষের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জনসচেতনতা এবং জ্ঞানের ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। শহর এবং গ্রামের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে , শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ করোনা সম্পর্কে কম জানে। একইভাবে, পুরুষ অপেক্ষা নারীদের মধ্যে করোনা সম্পর্কিত জ্ঞান কম। তবে, সার্বিকভাবে কেবলমাত্র ৩৮ ভাগ তথ্যদাতা একজন আরেকজন থেকে ৩ ফুট দূরত্ব মেনে চলার কথা উল্লেখ করেছেন। ভাইরাসের কারণে সামাজিকভাবে যে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া এবং মৃত্যুভয় রয়েছে তার একটি সুদূরপ্রসারী ব্যাপকতাও এখানে লক্ষ্য করা যায়।  

এই ছয়টি গবেষণা  মূলত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালা সামনে নিয়ে আসে যেগুলো বাস্তবায়িত হলে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবাপ্রদানকারী, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্যান্য প্রান্তিক মানুষজনের উপর এই মহামারীর  প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে। এগুলো হচ্ছে, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক এবং  মানসম্মত পিপিই সরবরাহ করা; ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য তাদের কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া; এবং চায়নার উহানে অনুসরণকৃত ৭/১৪ মডেল (৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন পালন) অনুসারে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পর্যায়ক্রমিক দায়িত্ব বন্টণ ও তাদের বাধ্যতামুলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ।

নিম্ন আয়ের লোকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা দরকার এবং ভুল তথ্য, গুজব ও সামাজিক নিগ্রহের বিষয় প্রতিরোধের জন্য প্রচারণার বাড়াতে হবে। এই জাতীয় প্রচারণাগুলো আরো কার্যকরী করার জন্য নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভিত্তিক সহজবোধ্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।  

2 comments:

  1. এ ধরণের আরও গবেষণা আমরা প্রত্যাশা করছি। প্রতিদিনই যেহেতু পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে তাই যে কোন টেলিফোনিক সার্ভেতে আপনারা ROBOCALL ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে খুব কম সময়ে গবেষণা ফলাফল জানানো সম্ভব হবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভবিষ্যত গবেষণায় আপনার পরামর্শ নিশ্চয়ই গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হবে। সর্বোপরি গবেষণালব্ধ ফলাফলসমূহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে বলে আমরা আশা করি।
      আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ!

      Delete